পা কেটে দিতে পারলে লাখ টাকা পুরস্কার
ইউনিয়ন আ.লীগ সভাপতির পক্ষে মাইকে ঘোষনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

চৌগাছা উপজেলার ফুলসারা ইউনিয়নে প্রকাশ্যে মাইকিং করে একজনের পা কেটে দিলে লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তীব্র আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ফুলসারা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জিয়াউর রহমান ঢালির পক্ষে ইকবাল হোসেন সম্প্রতি মাইকিং করে ঘোষণা দেন— মেহেদী হাসান লিটন নামের এক ব্যক্তির পা কেটে দিলে দেওয়া হবে এক লাখ টাকা পুরস্কার। এ সময় ইকবাল হোসেন স্থানীয় কিছু মানুষকে অর্থ দিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভেও অংশ নিতে উৎসাহিত করেন, ফলে দীর্ঘ সময় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।

এই ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, একজন সাবেক ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক জনপ্রতিনিধির ভাই কীভাবে জনসম্মুখে এ ধরনের হিংসাত্মক ঘোষণা দিতে পারেন? এছাড়া এটি একটি আইন বহির্ভূত বক্তব্য।

অভিযোগের বিষয়ে মেহেদী হাসান লিটন বলেন, “আমি বিএনপির একজন কর্মী। রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে আমার নামে ২১-২২টি মামলা রয়েছে। আগে বিদেশে ছিলাম, ফিরে এসে দেখি মামলা বেড়েছে। বর্তমানে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হচ্ছে।”

তিনি আরও জানান, “২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের নির্যাতনে বিদেশে পাড়ি জমাই। সাত বছর পর ২০২৩ সালে দেশে ফিরে দেখি আমার নামে আরো ৭/৮ টি নতুন মামলাও হয়েছে। ফিরে এসে স্থানীয় একটি পোল্ট্রি ফার্মে চাকরি করি। কিন্তু বিএনপি কর্মী হওয়ায় সেখানেও আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলায়।”

লিটনের দাবি, ফুলসারা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিয়াউর ঢালি ও তার অনুসারীরা তার ওপর হামলা-মামলার পরিকল্পনা করছেন।

চেয়ারম্যানকে মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি চেয়ারম্যানকে মারিনি। বরং মামলার বিষয়ে জানতে চাওয়ায় তিনি নিজেই আমার ওপর হামলা করেন। পরে স্থানীয়রা ছুটে এসে তাকে মারধর করে। এরপর তারা উল্টো আমার নামে চাঁদাবাজি ও হামলার অভিযোগ তোলে।”

চৌগাছা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক ফারুক আহমেদ বলেন, লিটন পরিবার আওয়ামী লীগ করতে পারে, তবে আমি যতদুর জানি লিটন একজন বিএনপি কর্মী। তবে তার কোন পদ-পদবী নাই।

এ বিষয়ে ফুলসারা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জিয়াউর রহমান ঢালির ভাই মিলনের সাথে মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার ভাই অসুস্থ্য। তিনি কথা বলতে পারবেন না বলে লাইটি কেটে দেয়।

চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, আসামি আটকের জন্য আমাদের অভিযান অব্যহত আছে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি মিটিং এ আছে বলে লাইটি কেটে দেয়।

এ ঘটনায় রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।